বইটি সম্পর্কে
আমার আত্মকথা : আমার কাহিনী, আমার ভাষা, বাবাসাহেব মারাঠি ভাষায় নিজের জীবনের কথা লিখেছিলেন, যা মূকনায়ক নামেও পরিচিত। এই পুস্তক ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, যার মধ্যে ড আম্বেদকর ক্রমানুসারে নিজের জীবনের বিভিন্ন আবেগ ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ছিলেন। জাতি ভেদাভেদ, সামাজিক বহিষ্কার এবং অস্পৃশ্যতার জন্য তাঁকে যে ভাবে সংঘর্ষ করতে হয়েছিল, এই পুস্তকে তারই বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি নিজের শিক্ষা, বিদেশে অধ্যয়ন, তাঁর কর্মজীবন, এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যকর্তা রূপে নিজের যোগদানের কথাও তুলে ধরেছেন।‘আমার আত্মকথা’ শূদ্রদের সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পুস্তকের মাধ্যমে এমন এক ব্যক্তির জীবনী থেকে আমরা প্রেরণা গ্রহণ করতে পারি, যিনি বহু প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং সেই সাথে সমাজের বঞ্চিত মানুষ গুলি যাতে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে তার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। এই পুস্তক জাতি ভেদাভেদের ভয়ংকর দিকটা তুলে ধরেছে, সেই সাথে সামাজিক ন্যায় ও লড়াইয়ের গুরুত্বকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।
পুস্তকের মুখ্য বিশেষত্ব গুলি হল
- জাতি ভেদাভেদ এবং অস্পৃশ্যতার ধ্বংসাত্মক প্রভাবের শক্তিশালী চিত্রণ শিক্ষা ও জ্ঞানের গুরুত্বকে বুঝতে শেখানো
সামাজিক ন্যায় এবং সমান অধিকারের জন্য সংঘর্ষ - প্রেরণাদায়ক জীবন কাহিনী যা সামাজিক পরিবর্তনকে প্রেরিত করে
‘আমার আত্মকথা’ থেকে যে শুধু ড আম্বেদকরের জীবন এবং বিচার সম্পর্কে জানা যায় তাই নয়, বরং সেই সাথে জাতিগত ভেদাভেদ, সামাজিক অন্যায়, এবং সমানাধিকারের বিষয় নিয়েও বহু তথ্য পাওয়া যায়। তা সকলের জন্যই প্রেরণার স্রোত। যা অনেক বেশি ন্যায়পূর্ণ এবং সমান সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়তে চায় ।
লেখক সম্পর্কে
ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকরকে ভারতের সংবিধানের স্থপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি একজন মহান পণ্ডিত, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সমাজ সংস্কারক ছিলেন। দলিত সম্প্রদায় থেকে আসা সত্ত্বেও, তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছিলেন এবং সমাজে দলিতদের উন্নয়নের জন্য তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। প্রাথমিক জীবন: *১৪ এপ্রিল, ১৮৯১। আম্বেদকর নগর, যা পূর্বে মাহু নামে পরিচিত ছিল, ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ইন্দোর জেলার একটি শহর। ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর এখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এটি একটি ঐতিহাসিক সেনানিবাসও। *শিক্ষার প্রতি তাঁর আগ্রহ তাঁকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে অনুপ্রাণিত করেছিল। শিক্ষা এবং কর্মজীবন: *তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশেও গিয়েছিলেন এবং অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং আইনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। *ভারতে ফিরে আসার পর, তিনি দলিতদের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলেছিলেন এবং অনেক সামাজিক সংস্কার শুরু করেছিলেন। *তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারতীয় সংবিধান প্রণয়নে অবদান: *ভারতের স্বাধীনতার পর, ডঃ আম্বেদকরকে গণপরিষদের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল। *তিনি ভারতীয় সংবিধান প্রণয়ন করেন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্য নিশ্চিত করার জন্য এতে অনেক বিধান অন্তর্ভুক্ত করেন। *ভারতীয় সংবিধানকে বিশ্বের দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে বিস্তারিত সংবিধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সামাজিক সংস্কার: *ডঃ আম্বেদকর দলিতদের উন্নয়নের জন্য অনেক সামাজিক সংস্কার শুরু করেছিলেন। *তিনি অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন এবং দলিতদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদানের জন্য কাজ করেছিলেন। *তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং দলিতদের বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেছিলেন। ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ছিলেন একজন মহান ব্যক্তি যিনি সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর অবদান কখনও ভোলা যাবে না। এটি কেবল একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকা। আম্বেদকরের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আরও জানতে, আপনি তাঁর জীবনী পড়তে পারেন অথবা তাঁর সম্পর্কে লেখা নিবন্ধগুলি পড়তে পারেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: *ডঃ আম্বেদকর ‘দ্য আনটাচেবলস’, ‘রাইদু’ এবং ‘বুদ্ধা অ্যান্ড হিজ রিলিজিয়ন’ সহ অনেক বই লিখেছেন। * তিনি অনেক সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছিলেন। * তিনি একজন দক্ষ বক্তা ছিলেন এবং অনেক জনসাধারণের বক্তৃতা দিয়েছিলেন। *আম্বেদকরের জন্মদিন ১৪ এপ্রিল আম্বেদকর জয়ন্তী হিসেবে পালিত হয়। * আম্বেদকর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। * ডঃ আম্বেদকরকে ভারতরত্ন প্রদান করা হয়েছিল। * তাঁকে ভারতের সংবিধানের স্থপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। * তাঁর চিন্তাভাবনা ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে। * আজও, দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁকে তাদের মশীহ বলে মনে করে।